পহেলা বৈশাখের দিনে বেড়ানো

প্রকাশঃ এপ্রিল ১৩, ২০১৬ সময়ঃ ১:২২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:২২ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

01_33রাত ফুরোলেই পহেলা বৈশাখ। বাঙালির প্রানের উৎসব। পহেলা বৈশাখ উদযাপন মানে কেবল সকালবেলা পান্তা-ইলিশ খাওয়াই নয়। পহেলা বৈশাখ উদযাপনে পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ঘুরতে বের হওয়াটাও যেন নিয়ম। কিন্তু কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায় বাংলা বছরের এই প্রথম দিনটিতে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা তো ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য যে কোন উৎসবের প্রাণকেন্দ্র। এছাড়াও রয়েছে রবীন্দ্র সরোবর, ধানমন্ডি লেকের মতো জায়গাগুলো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই জায়গাগুলোতে হয়তো আপনি এরই মধ্যে অনেকবার গিয়েছেন। তাই অনেকে হয়তো একটু নতুন জায়গা খুঁজছেন বেড়ানোর জন্য। আবার অনেকের হয়তো ইচ্ছা ঢাকার বাইরে একটু ভিন্ন পরিবেশে নববর্ষ উদযাপনের। কিন্তু বুঝতে পারছেন না কোথায় যাবেন।

যারা পহেলা বৈশাখে কোথায় বেড়াতে যাবেন ঠিক করে উঠত পারছেন না তাদের জন্যই এই প্রতিবেদন।

Taj-M১। সোনার গাঁ, বারদী, পানাম – বার ভূঁইয়ার একজন ঈসা খাঁর রাজধানী সোনার গাঁ। সোনার গাঁ, বারদী ও পানাম খুব কাছাকাছি অবস্থিত। যে কোন একটি জায়গা দেখতে গেলে অবশ্যই বাকি দুটোও দেখে আসা উচিত।
ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গ্রামবাংলার সৌন্দর্যের এক অপূর্ব সম্মিলন সোনার গাঁ। সোনার গাঁ জাদুঘর যে কোন পর্যটকেকে মুগদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। বর্তমানে সোনার গাঁয়ে দিল্লীর তাজমহলের আদলে তাজমহল তৈরি করা হয়েছে যা সোনার গাঁ বেড়াতে গেলে অবশ্যই দেখে আসবেন।

এখানকার লোক ও কারুশিল্প ফাউন্দেশনে রয়েছে পিকনিক করার সুব্যবস্থা। এছাড়া জাদুঘরের ভেতরে রয়েছে প্রধান ফটকে দুজন অশ্বারোহী, গরুর গাড়ির ভাস্কর্য, লাইব্রেরি ও ডকুমেন্টেশন সেন্টার, সদ্য নির্মিত জয়নুলের আবক্ষ ভাস্কর্য, ক্যান্টিন, লোকজ রেস্তোরাঁ, সেমিনার হল, ডাকবাংলো, কারুশিল্প গ্রাম, কারুপলৱ্লী, জামদানি ঘর, কারুমঞ্চ, কারুব্রিজ, মৃৎশিল্পের বিক্রয়কেন্দ্র, গ্রামীণ উদ্যান, আঁকাবাঁকা দৃষ্টিনন্দন লেক, বড়শিতে মাছ শিকার. নৌকায় ভ্রমণ ও বনজ, ফলদ, ঔষধিসহ শোভাবর্ধন প্রজাতির বাহারি বৃক্ষরাজি। অবশ্য এই লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনটি মূলতা সোনার গাঁর প্রাচীণ নগরী পানামে অবস্থিত।

অন্যদিকে, বারদীতে আছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্নিক সাধক শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম। এই আশ্রমে সমাহিত আছেন তিনি। আশ্রম থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দূরে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর পৈত্রিক বাড়ি।

যেভাবে যাবেন – সোনার গাঁ বাসে আসতে চাইলে গুলিস্তান থেকে স্বদেশ, বোরাক ও সোনারগাঁ সুপার সার্ভিস নামক বাসগুলোতে উঠতে হবে। তারপর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় এসে নামতে হবে। সেখান থেকে রিকশা করে সোনারগাঁ জাদুঘরে যেতে হবে। মোগড়াপারা বাসষ্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২ কি:মি: অভ্যন্তরে সোনারগাঁ যাদুঘরের অবস্থান এবং এর সাথেই রয়েছে পানাম নগরী। অথবা আপনি নিজস্ব গাড়িতেও সহজেই সোনার গাঁ যেতে পারেন।

1

২। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক – শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র এশিয়ার বৃহত্তম সাফারি পার্ক এটি। ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল গড়ে ৩৬৯০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়ে এই আধুনিক জীবজন্তুদের অভয়ারণ্য। পার্কে ১২২৫ একর জায়গা নিয়ে কোর সাফারি, ৫৬৬ একর জায়গা নিয়ে সাফারি কিংডম, ৮২০ একর জায়গা নিয়ে বায়োডাইভার্সিটি, ৭৬৯ একর এলাকা নিয়ে এক্সটেন্সিভ এশিয়ান সাফারি এবং ৩৮ একর এলাকা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। পার্কে বন ও অবমুক্ত প্রাণীর নিরাপত্তার জন্য ২৬ কিলোমিটার বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে দেশি-বিদেশি পর্যটকগণ বাস বা জীপে বসে ঘুরে বেড়ানো অবস্থায় বন্যপ্রাণী দেখতে পারেন।
পার্কে বাঘ, সিংহ, ভালুক চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, জেব্রা, জিরাফ, ওয়াইল্ডবিষ্ট, ব্লেসবক, উটপাখি, ইমু প্রভৃতি রয়েছে যারা স্বাধীনভাবে পার্কে ঘুরে বেড়াতে পারে।
সাফারি পার্কে রয়েছে আন্তর্জাতিকমানের প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র যারা দর্শনার্থীদের বন ও প্রাণি বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে।

পার্কে প্রবেশ ফি – পার্কে প্রবেশের ফি বয়স্কদের জন্য ৫০টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ২০ টাকা, শিক্ষার্থীদের ১০ টাকা, শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থী গ্রুপ ৪০ থেকে ১০০ জন ৪০০ টাকা, আর যদি শিক্ষার্থী গ্রুপ ১০০ জনের বেশি হয় তাহলে ৮০০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য ৫ ইউএস ডলার। তবে এ শুধু প্রবেশের খরচই। পার্কে প্রবেশের পর আপনার চাহিদা অনুযায়ী আলাদা টিকেট কাটতে হবে।

যেভাবে যাবেন – মহাখালী থেকে ভালুকা, ময়মনসিংহ বা শ্রীপুরের বাসে উঠতে হবে। গাজীপুরের বাঘের বাজার নেমে যাবেন। ২ ঘণ্টার মতো লাগবে। বাস থেকে নেমে রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশা করে পার্কে যাওয়া যাবে। এতে ২০ মিনিটের মতো লাগবে।
maxresdefault (2)

৩। দিয়া বাড়ি – সাম্প্রতিককালে ঢাকাবাসীর একটি পছন্দের বেড়ানোর জায়গায় পরিণত হয়েছে উত্তরার দিয়া বাড়ি। শহরের কোলাহল থেকে দূরে নৈসর্গিক সৌন্দর্যমন্ডিত একটি স্থান দিয়া বাড়ি। উত্তরার সেক্টর ১৫ তে অবস্থিত এই স্থানটি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বেড়াবার জন্য চমৎকার জায়গা। বিশেষ করে শরৎকালের কাঁশফুল দিয়া বাড়ির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। যদিও বছরের এই সময়টাতে আপনি কাঁশফুলের সৌন্দর্য দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন। দিয়া বাড়িতে খাবার ব্যবস্থা খুব ভালো। অনেকগুলো দোকান আছে।
উত্তরাগামী বাসে করে আপনি সহজেই দিয়া বাড়ি যেতে পারেন।

hatirgheel-6

৪। হাতির ঝিল – ইট-কাঠ আর জ্যামের নগরী ঢাকার এক ব্যতিক্রমী সুন্দর জায়গা হাতির ঝিল। সন্ধ্যা নামলেই ভ্রমনকেন্দ্রে পরিণত হয় হাতির ঝিল। শান্তি ও স্বস্তির খোঁজে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা এখানে আসেন। সন্ধ্যায় বাহারি আলোয় সেজে ওঠে হাতির ঝিল। যে আলোতে চুপচাপ বসে থেকে জীবনের হিসেব মেলানোর চেষ্টা করেন বহু মানুষ।
২০১৩ সালে উদ্বোধন হওয়া এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে তেজগাঁও-বেগুনবাড়ী, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মগবাজার, মধুবাগ, উলন, দাসপাড়া, মালিবাগের লোকজনের যাতায়াত সহজতর হয়েছে।
তবে এখনো এলাকাটি সম্পূর্ণরূপে গড়ে ওঠেনি। বিশেষ করে মহিলা দর্শনার্থীরা প্রায়শই ওয়াশরুম স্বল্পতার অভিযোগ তোলেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G